-- আম্মু জম্বিইই ভূত!!!
আমার চিৎকার শুনার সাথে সাথে রিয়ান তার অবস্থান ত্যাগ করে আমার মুখ চেপে ধরেন। আর অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। আমি রিয়ানকে দেখতে পেয়ে চুপ হয়ে যাই। সে রুদ্ধ গলায় বলে উঠে,
-- লাইক সিরিয়াসলি! আমি জম্বি ভূত? আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে জম্বি ভূত লাগে হ্যাঁ? আর এইগুলার যে কোন অস্তিত্বই নেই তা কি জানো না? এই সেন্স নিয়ে মেডিক্যাল পড়তে আসছো। জাস্ট রিডিকুলাস! ভাগিস এখন মা বাসায় নেই। তা না হলে তোমার এমন ষ্টুপিড চিৎকার শুনে মা হার্ট ফেল করতো।
রিয়ানের কথা শুনে আমি কটমট চোখে তার দিকে তাকাই। তারপর কিছু না বলে তার হাত এক ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেই। আর রাগে ফুসতে ফুসতে বলি,
-- আপনি কি এইখানে আমাকে এইসব শুনাতে আসছেন?
রিয়ান কিছু না বলে আরামসে চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। অতঃপর এক পায়ের উপর পা তুলে বসে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। হুট করে কেশে উঠে মুখ ঘুড়িয়ে নেয় সে। আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের দিকে তাকাই৷ অতঃপর পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নেই আর শরীরে থাকা ওরনাটা ঠিক মত গায়ে জরিয়ে নেই। তারপর তার দিতে তাকাই। সে এখনো অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে। শ্যামলা বর্ণ গায়ে সাদা শার্টটা একদম ফুটে আছে। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম। ঘামের কারণে শার্টের খানিকটা অংশ শরীরের সাথে একদম লেপ্টে গিয়েছে। চুলগুলো হাল্কা আগোছালো। বা হাতে একটি ব্ল্যাক চেইনের ঘড়ি। ডান দিকে মুখ করে রাখায় তার বা গালে থাকা ছোট কালো কুচকুচে তিলটি স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ন্ত বিকেলের লালচে আলো তার উপর পড়ছে। এইতে যেন তার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছে। আমি কিছুক্ষণ তারদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নেই। রিয়ান একটু নড়েচড়ে বসে শান্ত কন্ঠে বলে,
-- এইসব ষ্টুপিড জিনিস তো আর নিজ ইচ্ছায় করো নি তা আমি ভালো করেই জানি। হুট করে এত চেঞ্জ আসা কোন কালেই সম্ভব না। কাহিনি কি শুনি?
আমি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলি,
-- সেইদিন মেডিক্যাল থেকে ফিরার সময় রাস্তার পাশে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলাকে বসে থাকতে দেখি। সে সবার হাত দেখছিল আর কি জানি বলছিল। হুট করেই আমার মধ্যে কৌতূহল জাগা শুরু করে যে সে এইসব কি করছে। অতঃপর কাছে গিয়ে জানতে পারি সে নাকি যেকোনো মানুষের হাত দেখেই তার অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ বলে দিতে। আর তা নাকি মিলেও যায়। সব শুনে আমার মধ্যে এক এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিল তাই আমিও গিয়ে হাত দেখাই। আর আশ্চর্যজনক ব্যাপার তার কথার বেশখানিকটা আমার সাথে মিলে যায়। তো আমি তাকে বিশ্বাস করে নেই। অতঃপর আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু জানতে চেয়েছিলাম তখন তিনি খারাপ কিছুর ইঙ্গিতই আমায় করেছিলেন। কিন্তু তা বিশ্বাস করি নি আর চলে আসি। আর সেইদিনই এমন কিছু হয় যা আমাকে সেই মহিলার কথাগুলোর উপর বিশ্বাস করতে বাধ্য করে। তখন থেকেই মনের মধ্যে এক অজানা ভয় গেধে গিয়েছিলাম। অতঃপর পরেরদিন আমি তার কাছে যাই আর এর থেকে বাঁচার উপায় জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি আমায় বলেন যে, আগামী এক সপ্তাহ উদ্ভট কাজকর্ম করতে হবে যা আমি জীবনেও করি নি। এমনটা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই আমি এককথায় বিশ্বাস করে নি আর এত দিন ধরে এইসব উদ্ভট কাজ করি। যেমনঃ আপনার গেঞ্জি রাস্তার কুকুরকে পড়িয়ে দেওয়া, আপনার কফিতে ফ্যান্টা মিশিয়ে দেওয়া, রাত ৮ টা বাজে গাছের উপর বসে থাকা, আপনাকে রাত ৩ টাই ফোন করে জাগিয়ে দেওয়া, চকলেট-আইস্ক্রিম-কোক একসাথে মিলিয়ে খাওয়া আর আজকে সেই ছোট বাচ্চাটির কাছ থেকে আইস্ক্রিম কেড়ে খাওয়া। এখন একে ন্যাকামি, পাগলামো আর উদ্ভট কাজ যাই বলেন এইগুলো করেছিলাম।
রিয়ান আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে,
-- কি এমন ভবিষ্যৎ বানী করেছিল সে যে তুমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলে?
আমি মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,
-- বলা যাবে না সেটা একটা সিক্রেট। তা আপনার হাতের ঘা কি শুকিয়েছে? ব্যথা করে এখনো?
রিয়ান এইবার বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,
-- না। হাতটা এখন বেশ ভালোই আছে। বাই দ্যা ওয়ে এইভাবে আর কতদিন চলবে শুনি?
আমি রিয়ানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলি,
-- আজকে শেষ দিন।
রিয়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,
-- মিনিমাম সেন্স থাকলেও মানুষ এমন করে না যা তুমি করেছ। হাও ষ্টুপিড ইউ ক্যান বি! তা জ্বালানোর জন্য কি আর কাউকে পেলে না? আমাকেই শেষে চোখে পড়লো?
আমি দাঁত কেলিয়ে বলি,
-- আপনি তো আমার সুইট ভাইয়া। আপনাকে জ্বালালেও আপনি আমায় তেমন কিছু বলতেন তা আমি জানি। তাই তো আপনাকে জ্বালিয়েছি বেশি।
রিয়ান আমার কথা শুনে তেতে উঠে বলে,
-- এই মেয়ে তোমার কোন জন্মের ভাই হই আমি? যেই মেয়ের এখন বিয়ে দিলে কয়েকদিন পর হালি বাচ্চার মা হবে, সেই মেয়ে আমায় ভাইয়া ডাকছে? এইসব কি আদৌ মানা যায়?
আমি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
-- আমার বাচ্চা-কাচ্চার সঙ্গে আপনাকে ভাইয়া বলার কি সম্পর্কে শুনি? আর আপনাকে ভাই না ডাকলে কি ডাকবো শুনি?
রিয়ান আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-- কি সম্পর্ক তা না হয় পরে বুঝো। আপাতত এতটুকু জেনে নাও আমাকে কোন মতেই ভাই বলা চলবে না। আমার সুন্দর একটা নাম আছে ডাঃ সাদাত খান রিয়ান। সো আমাকে হয়তো ডাঃ সাদাত ডাকবে অথবা ডাঃ রিয়ান। গোট ইট!
আমি কিছু না বলে শুধু মাথা দুলাই। সে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুম থেকে চলে যায়। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ পর এক হালি কোন-আইস্ক্রিম নিয়ে এসে আমার কোলে দিয়ে বলে,
-- নাও এখন যত পারো ততো খাও। এন্ড ফার্দার মোর আজকের মত যাতে কোনদিন না হয়। কিছু দরকার হলে আমাকে বলবে আমি এনে দিব।
এই বলে হনহনিয়ে রুম থেকে চলে যায়। আর আমি হ্যাবলাকান্তের মত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। অতঃপর মুচকি হেসে চুপচাপ আইস্ক্রিম খুলে খেতে থাকি আর সেই মহিলার ভবিষ্যৎ বানীর কথা মনে করতে থাকি। সেইদিন তিনি বলেছিলেন, যাকে আমি অনেক ভালবাসি অথবা যে আমার ভালবাসার মানুষ তার উপর ঘোর সংকট দেখা দিচ্ছে। এমনও হতে পারে যে আমি তাকে চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলতে পারি। তখন কথাটা বিশ্বাস না করলেও রাতে যখন তার এক্সিডেন্ট হয় তখন আর সেই মহিলার কথাটি বিশ্বাস না করে থাকতে পারি নি। কেন না তখন যে আমার তাকে হারানো একটা ভয় মনের মধ্যে ঢুকে যায়। তাই তো এইসব উদ্ভট কাজগুলো করি। এর জন্য ষ্টুপিড হলে হলাম। সে ভালো থাকুক এইটাই আমার একমাত্র ইচ্ছা।
অতঃপর সব মনে করেই আমি মুচকি হাসি। আর আইস্ক্রিম খাওয়ায় মন দেই।
________________________________________
টিউশন শেষ করে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে চলেছে পায়েল। সন্ধ্যা প্রায় নেমে আসবে এমন অবস্থা। পায়েল দ্রুত পা চালাচ্ছে বাসায় পৌঁছাবার জন্য। এমন সময় রাস্তার পাশের টংঘরে বসে থাকা সেই চিরচেনা ব্যক্তিকে দেখে থমকে যায় সে। হাত পা রীতিমতো কাঁপতে শুরু করে। কপালে নতুন করে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হতে শুরু করে। আগে তো গরমের কারণে ঘামছিল সে কিন্তু এখন ভয়ে। পায়েল একবার ভাবলো উল্টো পথে হাটা দিবে৷ কিন্তু এইভাবে আর কত দিন সে পালিয়ে বেড়াবে? তাই সে আজ ঠিক করলো সে ভয় পাবে না। চুপচাপ সেই ব্যক্তিটির পাশ কাটিয়ে চলে যাবে৷ তো যে ভাবা সেই কাজ। পায়েল দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করে। চোখের পলকেই সেই টংঘরটি পেড়িয়ে আসে। টংঘর থেকে কিছু দূর আসতেই সেই অতি পরিচিত কন্ঠ তার কানে ভেসে আসে। সে ব্যক্তিটি পিছন থেকে অনাবরত তার নাম ডেকেই চলেছে৷ কিন্তু পায়েল তো আজ থামবে না। তাই সে আরও দ্রুত পা চালিয়ে হাটা শুরু করে। একসময় সে হাতে টান অনুভব করে। সাথে সাথে সে থমকে যায়। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। পায়েল না ঘুরেই বলে,
-- আমার হাতটা ছাড়ুন আদিব। লোক দেখছে
আদিব এইবার আহত কন্ঠে বলে,
-- কেন এমন করছো প্রেয়াসী? ১ মাস যাবৎ ধরে দেখছি তুমি আমাকে এভোয়েট করছো। যোগাযোগ করার সকল মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছ। না দেখা করছো আর না কথা বলার সুযোগ দিচ্ছ। আমার দ্বারা কি কোন ভুল হয়েছে? ভুল হয়ে থাকলে বলো। কি করেছি আমি? একবার তো বলো।
পায়েল হাত ঝাড়া দিয়ে বলে,
-- কিছু করেন নি আপনি।
আদিব কিছুটা মৃদু স্বরে বলে,
-- তাহলে এমন কেন করছো? আমাকে কি এখন আর ভালো লাগে না?
পায়েল মুখ গুড়িয়ে নিয়ে বলে,
-- না লাগে না। একজন মানুষকে তো আর সারাজীবন ভালো লাগতে পারে না। তাই না! আর এইভাবেও আপনার থেকে আমি এখন বোর হয়ে গিয়েছি। তাই আপনাকে এভোয়েট করছিলাম।
আদিব অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলে,
-- এইটা তুমি বলছো? যে নাকি আমার এক ঝলক দেখার জন্য ছটফট করতো। আমার কন্ঠ যদি একদিন শুনতে না পেত তাহলে কান্না করে চোখ মুখ একদম ফুলিয়ে ফেলতো। আমি না খেয়ে থাকলে নিজেও না খেয়ে থাকতো।
পায়েল চোখ বন্ধ করে বলে,
-- সেই সবই আবেগ ছিল। ছোট বয়সে করা ভুল মাত্র ছিল।
আদিব এইবার হাল্কা চেঁচিয়ে বলে,
-- তুমি বুঝতে পারছো যে তুমি ঠিক কি বলছো? তুমি এতটাও ছোট ছিলে না যে আবেগের বসে এইসব করতে। আমি তোমার চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখেছি প্রেয়াসী। তুমি কেন আমায় মিথ্যে বলছো?
পায়েল সেই আগের ন্যায় মুখ ঘুরিয়ে বলে,
-- আমি কোন মিথ্যা বলছি না। যা সত্যি তাই বলছি। আর আপনি আমার চোখে যা দেখেছেন তা সবই আবেগ ছিল ভালবাসা না।
আদিব এইবার রাগে পায়েলের কাধ দুটো চেপে ধরে বলে,
-- এই কথাটি আমার চোখে চোখ রেখে বলো যে, সেগুলো ভালবাসা ছিল না শুধুমাত্র আবেগ ছিল।
পায়েল এইবার ছলছল চোখে আদিবের দিকে তাকায়। পায়েল ছলছল করা চোখ দুটো দেখার সাথে সাথে আদিব পায়েলকে ছেড়ে দেয়। পায়েল আর কিছু না বলে দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে যায়। আদিব পিছন থেকে কয়েকবার "প্রেয়াসী" বলে ডাকার পরও সে থামে না। আদিব সেইদিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে উল্টো পথে হাটা দেয়। আজ তার মন কালো মেঘের আবরণে ঘেরা। কিন্তু এই মেঘ যে বর্ষণের জন্য নয়।
পায়েল বাসায় এসেই সোজা রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দরজা দিয়ে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে সে। বিছানার উপর থাকা বালিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আর মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে। চোখের অশ্রুমালা দিয়ে বালিশটি ভিজিয়ে দিতে থাকে। মনে মনে বলতে থাকে,
-- আদিব আমার থেকে আপনি যত দূরে থাকবেন ততই আপনি ভালো থাকবেন। আমার সাথে থেকে আপনি কখনো সুখি হতে পারবেন না। আমি জেনে শুনে কিভাবে আপনার খুশি কেড়ে নেই বলুন। ভালবাসি তো আপনাকে। আপনি হয়তো এখন খুব কষ্ট পাবেন কিন্তু বিশ্বাস করেন তা সাময়িকের জন্য। একবার আমাকে ভুলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সব!
এতটুকু ভেবেই আমার কান্না করতে থাকে সে। তার যে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভিতর যেন কেউ তার রক্তক্ষরণ করছেন। সহ্য হচ্ছে না এইসব তার। কিন্তু তারও যে কিছু করার নেই। তাকে যে এইসব সহ্য করতেই হবে। কেন না ভালবাসার মানুষটিকে ভালো রাখতে হলে তাকে এই কষ্ট সহ্য করতেই হবে।
ভালবাসা হয়তো এমনই হয়৷ কেউ যদি ভালবাসার মধ্যে থাকে তাহলে, নিজের উপর শত আঘাত হানা দিলেও সে চুপচাপ তা সয়ে যায় কিন্তু ভালবাসার মানুষটির গায়ে একটি আঁচড় যে তার বোধগম্য নয়। সে তো সবসময় চায় তার ভালবাসার মানুষটি ভালো থাকুক।
_________________________________________
অন্ধকার এক রুমে মাস্ক পরিধান করা একটি লোক চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে। বা হাতটা দিয়ে বার বার কপাল চেপে ধরছে। আর ডান হাতটি দিয়ে টেবিলে থাকা পেপার ওয়েট ঘুরাচ্ছে। মাস্কের আড়ালে বেড়িয়ে থাকা তার নয়ন দুইটি অসম্ভব লাল। তারই সাথে প্রচন্ড হিংস্র তার চাহনি। যা যে কাউরো বুক কাঁপিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এমন সময় দরজায় হাল্কা টোকা পড়ে। লোকটি সেই একই অবস্থায় বসে থেকে দরজার ওপারে থাকে মানুষটিকে ভিতরে আশার অনুমতি দেয়। অনুমতি পেয়েই দরজা ঠেলে এক যুবক ছেলে ভিতরে আসে। অতঃপর মাস্ক পরিধান করা লোকটির সামনে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
লোকটি অতি কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করে,
-- এনি নিউস আসিফ?
লোকটির কথা আসিফ নামের যুবকটি একটু নড়েচড়ে উঠে। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
-- নো বস!
কথাটি শুনার সাথে সাথে মাস্ক পরিধানকারী লোকটি তার ডান হাতে থাকা পেপার ওয়েটটি আসিফের মাথা বরাবর নিক্ষেপ করে ছুঁড়ে মারে। অন্ধকারের মধ্যেও লোকটির নিশানা ছিল অতি সুক্ষ্ম। পেপার ওয়েটটি আসিফের মাথায় লাগতেই আসিফ ব্যথায় কুঁকড়ে যায়। চাপা আর্তনাদ বেড়িয়ে আসে মুখ দিয়ে। কপাল বেয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। এমন সময় সেই লোকটি চেঁচিয়ে বলে,
-- তোর সাহস কিভাবে হলো এই জবাব নিয়ে আমার সামনে দাঁড়ানোর? তুই জানিস না আমি না জিনিসটা একদম সহ্য করতে পারি না? আই জাস্ট ওয়ান্ট রেজাল্ট। আই ওয়ান্ট রেজাল্ট আসিফ।
মাস্ক পড়া লোকটির কথায় আসিফ ছেলেটি কেঁপে উঠে। সে কপালে ফেটে যাওয়া জায়গাটি চেপে ধরে বলে,
-- সরি বস! আর এমন হবে না।
মাস্ক পড়া লোকটি কর্কশ কন্ঠে বলে,
-- মনে থাকে যেন। এই রহিম! রহিম!
"রহিম" নামক ব্যক্তির ডাক পড়তেই মাঝ বয়সী এক ছেলে হুমড়ি খেয়ে দ্রুত রুমের ভিতরে আসে। তারপর সেই লোকটির কাছে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-- যে বস ডাকসিলেন?
লোকটি এইবারও কর্কশ কন্ঠে বলে,
-- হুম! আসিফকে নিয়ে যা আর মাথায় ব্যান্ডেজ করিয়ে ঔষধ কিনে দিস। এই নে টাকা!
রহিম কিছু না বলে চুপচাপ টাকা নিয়ে বলে,
-- আইচ্ছা বস।
অতঃপর আসিফকে নিয়ে চলে যায় সে। আসিফ কিছু বলতে নিলেও রহিমের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়।
-- আমগো বস এমনই। আঘাতও তিনি দিব মলমও তিনি লাগাইবো। তাই এখন বারতি প্রশ্ন কইরা লাভ নেই।
আসিফ মনে মনে বলতে থাকে,
-- অদ্ভুত তো!
_________________________________________
রাত তখন প্রায় ১২ টায় ছুঁই ছুঁই। রাতের খাবার শেষে আমি টেবিলে বসে পড়ছি। আর ডান হাতে থাকা কলমটি কামড়াচ্ছি। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে। আমি একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নেই। অতঃপর ঘড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দরজার দিকে ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে তাকাই৷ বিছানা থেকে ওরনাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলার জন্য অগ্রসর হই। দরজা খুলার সাথে সাথে কেউ আচমকা আমার হাত ধরে টান দেয় আর আমায় টেনে নিয়ে যেতে থাকে। আমি চিৎকার করতেই যাব ঠিক তখন.......
#চলবে
0 Comments