Ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

আসক্তিময় ভালোবাসা পর্ব ১


 মেডিক্যালে উপস্থিত সকলের সামনে এক পায়ে কানে ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আমার ঠিক অপর পাশেই ড. রিয়ান আমার দিকে রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে তার রাগ বিরাজমান। আশে পাশে উপস্থিত সকলেই মুখ টিপে টিপে হাসছে। পাশেই ৭-৮ বছর বয়সী একটি ছেলে সমান তালে কেঁদে চলেছে। ড. রিয়ান এইবার সেই ছেলেটির সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,


-- কাঁদে না বাবুটা। তুমি না ভালো বাবু। 


ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-- আমার আইস্ক্রিম! 


ড. রিয়ান মৃদু সরে বলে,

-- সেটা তো এই রাক্ষসী কটকটি খেয়ে ফেলেছে। তাই তো দেখছো না ওকে শাস্তি দিয়েছি। 


ছেলেটি ড. রিয়ানের কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে আর আমি রাগে ফুসতে থাকি। এরই মধ্যে পিওন এসে হাজির  হয়। হাতে তার দুইটা কোন-আইস্ক্রিম। ড. রিয়ান সেগুলো তার হাত থেকে নিয়ে ছেলেটিকে দিয়ে দেয়। আর বলে,


-- এই নাও তোমার জন্য আইস্ক্রিম। ওই আইস্ক্রিমের কথা এখন ভুলে যাও কেমন।


ছেলেটি খুশি হয়ে ড. রিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

-- তুমি অনেক ভালো আঙ্কেল। কিন্তু আর ওই আন্টিটা অনেক পঁচা। আমার আইস্ক্রিম খেয়ে ফেলেছে সে।


ছোট ছেলেটির কথা শুনে আশেপাশে অবস্থিত সকলেই হো হো করে হেসে উঠে। আর আমি নাক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। অতঃপর ছেলেটির ঢ্যাং ঢ্যাং করতে করতে ওর মার সাথে চলে যায়। ড. রিয়ান এইবার অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রুদ্ধ গলায় বলে,


-- আর ইউ লোস্ট ইউর মাইন্ড মিস রিয়ানা? এইসব কোন ধরনের সভ্যতা শুনি? একটা ছোট বাচ্চা থেকে কেড়ে কেউ এইভাবে আইস্ক্রিম খায়? আর যাই হোক মেডিক্যাল স্টুডেন্টদের থেকে এইসব মোটেও আশা করা যায় না। 


আমি চট জলদি বলে উঠি,

-- কেন আশা করা যায় না? মেডিক্যাল স্টুডেন্টরা কি মানুষ না নাকি? তাদের কি আইস্ক্রিম দেখলে লোভ হতে পারে না?


ড. রিয়ান এইবার চেঁচিয়ে বলে,

-- জাস্ট শাট আপ! একে তো বাচ্চা ছেলেটির আইস্ক্রিম কেড়ে খেয়ে নিয়েছ আবার বড় বড় কথা৷ নেক্সট টাইম এমন দেখলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। এন্ড নাও গেট লোস্ট ফ্রোম হিয়ার। 


ড. রিয়ান এর "গেট লোস্ট" বলতে দেরি আমার দৌঁড় দিতে নয়। এক দৌঁড়ে ক্যান্টিনে এসে হাজির হই আমি। আমার এমন দৌঁড় দিয়ে আসা  দেখে কেন্টিনে উপস্থিত অনেকেই হতভম্ব হয়ে যায়। কিন্তু তাতে আমার কি? আমি চুপচাপ গিয়ে একটা টেবিলে বসলাম। এর কিছুক্ষণের মাঝেই আমার দুই বান্দরনী থুরি বান্ধবী আনিশা আর পায়েল এসে হাজির। তারা আমার সামনে চেয়ার টেনে বসতেই আমি তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। তা দেখে আনিশা দাঁত কেলিয়ে বলে,


-- সাব মাজামা?


আমি আনিশার দিকে তাকিয়ে দ্বিগুণ দাঁত কেলিয়ে বলি,

-- তেরা পাজামা। 


সাথে সাথে আনিশার হাসি ফুস হয়ে যায়। তা দেখে আমি আর পায়েল হাসিতে গড়াগড়ি খেতে থাকি। পায়েল নিজের হাসিটা থামিয়ে বলে,


-- কি দরকার ছিল তখন বাচ্চাটির থেকে আইস্ক্রিমটা কেড়ে নেওয়ার? ড. রিয়ান  কাছ থেকে খামাখা শাস্তি প্লাস বকাটি খালি। 


আমি ভাবলেশহীন ভাবে বলি,

-- সো হোয়াট? বকার ভয়ে কি আইস্ক্রিম খাওয়া ছেড়ে দিব নাকি? ইউ নো না আ'ম এডেক্টেট টু আইস্ক্রিম। তাই তখন আইস্ক্রিম দেখে লোভ সামলাতে পারি নি। এখন আমি কি জানতাম ওই ছোট বাচ্চাটা চেঁচামেচি করে পুরো হসপিটাল এক করে ফেলবে। 


পায়েল এইবার নরম সুরে বলে,

-- তার জন্যই তো ড. রিয়ান  পকেট ফাঁকা হলো। বাচ্চাটিকে তো সেই আইস্ক্রিম দিয়ে চুপ করালো। 


আনিশা দাঁত কেলিয়ে বলে,

-- ইশ! ড. রিয়ান কত ভালো দেখেছিস? তার এমন কর্মকান্ডেই তো আমি তার উপর ক্রাশ খেয়েছি। 


আনিশার কথা শুনে আমি ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাই। কিন্তু ও সেই দিকে তোয়াক্কা না করে বলে,

-- আমি বুঝি না তোর আর ড. রিয়ানের মধ্যে এত ঝগড়া কেমনে হয়? তোদের দেখলে মনে হয় টম এন্ড জেরি। এত হ্যান্ডসাম একটা ডাক্তারের সাথে কি ঝগড়া করা যায়? তার সাথে তো শুধু প্রেম করা যায়। 


শেষের কথা বলার সময় আনিশা লাজুক হাসে। তা দেখে আমার পিত্তি জ্বলে যায়। আমি ধাম করে আনিশার পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে বলি,

-- বদ মেয়ে একটা! স্যারদের প্রতি নজর দেস। লজ্জা করে না তোর? 


আনিশা পিঠ বেকিয়ে বলে,

-- ওই কিসের স্যার হ্যাঁ? মাসে একদিনই ক্লাস করায় আমাদের। সো এত এত স্যার স্যার করে লাভ নেই। আর এমনে ড. রিয়ান আমাদের তাকে স্যার বলতে মানা করেছে। তাকে ড. সাদাত ডাকতেই বলেছে। সো নজর দেওয়াই যাই। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। 


আমি কিছু না বলে আনিশার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে থাকি৷ তা দেখে পায়েল নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে কি জানি বের করে। তারপর আমার দিকে মোবাইল স্ক্রিনটা ঘুরিয়ে বলে,

-- আরেহ বেবি ইধার তো দেখো!


আমি কটমট চোখে মোবাইলে তাকাতেই দেখি আমার তখনকার ছবি। যখন আমি এক পায়ে কানে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেটা দেখে আমি দ্রুত মোবাইল নিতে গেলে পায়েল দেয় দৌঁড়। আমি চেঁচিয়ে বলি,


-- এই মাইয়া! ফোন দে বলছি। ছবিটা ডিলিট না করলে আজ তোর দশদিন কি আমার পঞ্চাশ দিন। 


এই বলে আমিও ওর পিছে ছুটে যাই। 


🍁


রাস্তার পাশে ফুটপাত দাঁড়িয়ে আছি। আশে পাশে কোন খালি রিকশা নেই। মাথার উপর জলন্ত অগ্নিপিন্ড সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর নিজের তীক্ষ্ণ রশ্মি চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই তীক্ষ্ণ রশ্মিকে অন্য ভাষায় বলা যায় কাঠ ফাটা রোদ। কপাল বেয়ে আমার চুয়ে চুয়ে ঘাম পড়ছে। সামনে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো ঘামে একদম লেপ্টে গেছে। গায়ে জড়িয়ে থাকা সাদা এপ্রোনের পিছনের দিকের বেশ খানিক অংশও হাল্কা ভিজা। বেশ অনেকক্ষণ ধরে খালি রিকশার অপেক্ষা করছি কিন্তু আজ যেন খালি রিকশা চোখেই পড়ছে না। যার ফলে ধীরে ধীরে মুখের মধ্যে বিরক্তিকর একটা ভাব ফুটে উঠতে শুরু করেছে। এমন সময় ড. রিয়ান গাড়ি নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়। আমার দিকে থাকা লুকিং গ্লাসটা নামিয়ে দিয়ে রুদ্ধ গলায় বলে,


-- গাড়িতে উঠে বসো। 


আমি কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলি,

-- আমি আপনার সাথে যাব না। 


ড. রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-- লাস্ট টাইম জিজ্ঞেস করছি। গাড়িতে উঠবে কি না?


আমি সোজাসুজি মুখের উপর বলি,

-- নায়ায়া! 


এই বলে হাটা ধরলাম। বেশ খানিক দূর আসতেই দেখি ড. রিয়ানের গাড়ি আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তা দেখে আমি রাগে ফুসতে ফুসতে বলি,

-- আস্ত খারুশ একটা। এক তো সকলের সামনে আমাকে শাস্তি দিল, বকা দিল আবার এখন আমাকেই এটিটিউড দেখাচ্ছে। আজ বাসায় গিয়ে যদি আন্টিকে বিচার না দিছি তাহলে আমার নামও রিয়ানা না। হুহ!


এই বলে সামনে হাটা ধরতেই দেখি উল্টো রাস্তা দিয়ে একটা খালি রিকশা আসছে। আমি সেই দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রিকশাটি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,


-- আপা কই যাইবেন? আহেন আপনারে দিয়া আহি। 


আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে উঠে পড়ি। অতঃপর ঠিকানাটা বলে দেই। 


_________________________________________


বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে আছি। রেনু আন্টি সুন্দর করে আমায় ভাত মেখে খায়িয়ে দিচ্ছে। আমি আন্টির দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট উল্টিয়ে বলি,


-- তুমি কিন্তু আজকে রিয়ান ভাইকে ইচ্ছা মত বকা দিবে। সে আমাকে পুরো হসপিটালের সামনে বকেছে। 


আন্টি মুচকি হেসে বলে,

-- তাই নাকি? আচ্ছা রিয়ান আসুক ওকে ইচ্ছা মত বকে দিব নে। আমার মামনিটাকে বকেছে এত বড় সাহস ওর।


আমি এইবার খুশি খুশি গলায় বলি,

-- এই না হলো আমার আন্টি। আই লাভ ইউ আন্টি। উম্মাহ! বাই দ্যা ওয়ে আই হ্যাভ গভীর প্রশ্ন।


আন্টি মিষ্টি হেসে বলে,

-- করে ফেল। 

আমি কিছুটা ভাবার অভিনয় করে বলি,

-- আচ্ছা রিয়ান ভাই কি আদো তোমারই ছেলে? না মানে আমার না সন্দেহ হয়। তুমি এত ভালো সুইট একজন মানুষ আর সে আগুনের গোলা। আস্ত খারুস একটা। 

রেনু আন্টি তখন হেসে বলে,

-- ছেলেটার রাগ বরাবরই বেশি তুই তো জানিস এই। এইখানে এসেছিস প্রায় ৭-৮ মাস তো হলোই। নিশ্চয়ই বুঝেছিস এর রাগ সাত আসমানে থাকে। 

আমি তখন মুখ ফুলিয়ে বলি,

-- সত্যি করে বলো তো একে কুড়িয়ে আনো নি তো? 

রেনু আন্টি ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

-- সত্যি তো কুড়িয়ে আনি নি তো?

কথা বলার সাথে সাথে দুইজনে হেসে উঠি। রেনু আন্টি আর আমি অনেক ফ্রি। তাই আমাদের মধ্যে এমন মশকারা সম্পর্ক বিদ্যমান। রেনু আন্টি আমায় খায়িয়ে দিয়ে চলে যা। বেশ কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে বাবার কল আসে। 

আমি ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে মিষ্টি সুরে বাবা বলে উঠে,

-- আমার আম্মুটা কেমন আছে? ভালো আছে তো

আমি তখন ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলি,

-- আলহামদুলিল্লাহ আব্বু। তুমি ভালো আছো তো?

আব্বু মিষ্টি হাসি হেসে বলে,

-- আলহামদুলিল্লাহ মা। তা সেখানে সবাই ভালো তো। সবাই তোর ঠিক মত খেয়াল রাখতে তো?

আমি মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলি,

-- সবাই এখানে ভালো আছে আব্বু। এইখানে সকলেই আমায় খুব ভালবাসে। বিশেষ করে রেনু আন্টি৷ নিজের মেয়ের মতই আদর করে। বুঝতে দেয় না যে আমি তার স্বামীর বন্ধুর মেয়ে। আঙ্কেলও আমার প্রতি বেশ যত্নশীল। আর ওই খারুস থুরি মানে রিয়ান ভাইয়াও ভালোই। ( আস্ত খারুস একটা। সারাদিন আমায় বকে। মনে মনে কথাটি বললেও মুখে আর বলে নি।) 

আমি আরও বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দেই। তারপর সটান হয়ে শুয়ে পড়ে লম্বা একটা ঘুম দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। এর মধ্যে বলি আমি আসলে এইখানে কি করছি। 

আমি রিয়ানা ইসলাম। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। বাবা জাহাজ ব্যবসায়ী আর মা একজন সামাজিক সেবিকা। বাবার কাজের সুবাদে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি চট্টগ্রামে। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল একজন ডাক্তার হওয়ার। যার জন্য ছোট থেকেই কঠোর পরিশ্রম করে এসেছি ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার জন্য। আর অবশেষে পেয়েও যাই। কিন্তু সমস্যা হলো ঢাকায় আমার কোন আত্মীয় নেই বললেই চলে। আর আব্বু আমাকে হোস্টেলে রাখতে কিছুটা আপত্তি করছিলেন। এখনকার হোস্টেলের অবস্থা ও পরিবেশ সম্পর্কে সকলেই কম বেশি জানে। তাই বাবা কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় আমার থাকাটা নিয়ে। তখন তার অতি প্রিয় বন্ধুর কথা মনে পড়ে। তার সাথে ভালো যোগাযোগ থাকা সুবাদে বাবা আমার কথা বলাতেই মিনাজ আঙ্কেল নিঃসংকোচে আমায় তার বাসায় থাকার আহ্ববান জানান। তার একমাত্র ছেলেও নাকি ঢাকা মেডিক্যালে কিছুদিন আগেই ডাক্তার হিসাবে নিয়োগ হয়েছে। আমার জন্য নাকি আরও সুবিধা হয়ে যাবে। আর তাই বাবাও এক কথায় রাজী হয়ে যায়। আর কিছুদিনের মধ্যে আমিও এসে পড়ি এইখানে। আর এইখানে এসেই ড. রিয়ানের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। ছোট থাকতে নাকি ড. রিয়ানের চট্টগ্রামেই ছিলেন। অতঃপর তিনি ক্লাস ফোরে থাকতে পুরো পরিবারসহ ঢাকায় শিফট যাত। তখন আমার বয়স ৫--৬ বয়স ছিল। যার জন্য ড. রিয়ানকে আমার একদমই মনে ছিল না। হয়তো তারও না। এইখানে আশার পরই আমাদের নতুন করে পরিচয় হয়। 

চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় একটি লোক বসে আছে। মুখ চোখ তার কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা। সে ক্রমাগত নড়াচড়া করেই চলেছে। রুমটাতে কেমন গুমোট ভাব ছড়িয়ে আছে। রুমটা জানালাবিহীন হওয়ায় কেমন ভ্যাপ্সা গন্ধ নাকে এসে বারি খাচ্ছে। মাঝে ঝুলতে থাকা ছোট হলুদ লাইটের আলোয় রুমের মধ্যে থাকা অন্ধাকার ভাবটি কিছুটা কমে এসেছে। নিস্তব্ধতা বিরাজমান করছে রুমটির মধ্যে। হুট করে মাঝে মধ্যেই কানে সেই লোকের তীব্র আর্তনাদ ভেসে আসছে। কেন না তাকে যে ক্ষণে ক্ষণে মৃদু পরিমাণে ইলেকট্রনিক শক দেওয়া হচ্ছে। বেশ অনেকক্ষণ যাওয়ার পর একজন তার মুখ খুলে দেয়। অতি হিংস্র চাহনির আগন্তুক এসে সেই লোকটির চুলের মুঠি ধরে বলে,

-- সত্যিটা বলে বেঁচে যাবি। বল সেটা কোথায়? 

লোকটা মিনতি সুরে বলে,

-- আমি জানি না। আমি কিছু জানি না। ছেড়ে দেন আমায়। 

কিন্তু লোকটির কথা হয়তো আগন্তুকটির  পছন্দ হলো বলে মনে হলো না। সে কাউকে চোখের ইশারা করতেই লোকটি আবার ইলেকট্রনিক শক খায়। সাথে সাথে তার তীব্র আর্তনাদ রুমে কম্পন হতে থাকে। এমন সময় সেই আগন্তুকটি সেই লোকটির চুলের মুঠি ধরে বলে,

-- লাস্ট চান্স দিচ্ছি বলে দে। তা না হলে কথা বলার মত অবস্থায় থাকবি না। 

সেই লোকটি আগের ন্যায় মিনতি সুরেই বলে,

-- আমি কিছু জানি না!

আগন্তুকটি এইবার সেই লোকটির মুখটা আবার বেঁধে গিয়ে বলে,

-- তুই যদি কিছু নাই জানিস তাহলে তুই আর আমার কোন কাজেরই না। বয়েস! জাস্ট ফিনিস হিম। 

 এই বলে সে পৈঁচাশিক হাসি হাসে আর সেখান থেকে চলে যায়। আমি ঘুমে একদম আচ্ছন্ন হয়ে আছি। এমন সময় মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রথমত তেমন তোয়াক্কা না করলেও ধীরে ধীরে অনুভূতিটা গাঢ় হতে থাকে। সাথে সাথে কেমন জানি অস্বস্তি হতে শুরু করে। অতঃপর আর থাকতে না পেরে হুট করেই আমি লাফ দিয়ে উঠে বসি। পাশে থাকা চেয়ারে কাউরো অবয়ব দেখতে পেয়েই আমি দেই এক চিল্লান,


-- আম্মু জম্বিইই ভূত!!!


Post a Comment

0 Comments

তুমি আমার হবে একদিন