রাত তখন প্রায় ১২ টায় ছুঁই ছুঁই। রাতের খাবার খেয়ে আমি টেবিলে বসে পড়ছি আর ডান হাতে থাকা কলমটি কামড়াচ্ছি। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে। আমি একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নেই। অতঃপর ঘড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দরজার দিকে ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে তাকাই৷ বিছানা থেকে ওরনাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলার জন্য অগ্রসর হই। দরজা খুলার সাথে সাথে কেউ আচমকা আমার হাত ধরে টান দেয় আর আমায় টেনে নিয়ে যেতে থাকে। আমি চিৎকার করতেই যাব ঠিক তখনই রিয়ানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে থেমে যাই। তার এমন দৃষ্টি দেখে আমি তার দিকে দিকে ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে তাকাই৷ সে কিছু না বলে আমার হাত ধরে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে। অতঃপর লিফটের সামনে এসে দাঁড়াতেই আমি চাপা স্বরে বলি,
-- কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?
রিয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে একবার আমার দিকে তাকায়। অতঃপর কিছু না বলে সটান হয়ে দাঁড়ায়। এক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে থাকে আর অন্য হাত নিজের টাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। লিফট খুলতেই সে আমায় নিয়ে লিফটে ঢুকে পড়ে। আর আমি তখনও উত্তর পাওয়ার আশায় তার দিয়ে হ্যাবলাক্যান্তের মত তাকিয়ে থাকি। গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসতেই সে আমায় তার গাড়ির সামনে নিয়ে যায় অতঃপর আমায় জোর করে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ঘুরে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে। আমি এতক্ষণ হ্যাবলাক্যান্তের মত তাকিয়ে থাকলেও এইবার আমি তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাই। আর রুদ্ধ গলায় বলি,
-- হচ্ছেটা কি এইসব ডাঃ রিয়ান? এত রাতের বেলায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?
রিয়ান কিছুক্ষণ আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার দিকে একটু ঝুঁকে আসে। তা দেখে আমি মাথাটা একটু পিছিয়ে নেই। তার এমন হুট করে কাছে আসা দেখে কেমন এক অস্বস্তি কাজ করছিল আমার মধ্যে। রিয়ান তা দেখে মৃদু স্বরে বলে,
-- কিডন্যাপ করছি তোমায়? ডু ইউ হ্যাভ এনি প্রবলেম?
এই বলে আমার মুখের উপর হাল্কা ফু দিয়ে কপালের পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো বাতাসে উড়িয়ে দেন। তার এমন এহেম কাজে আমি পুরো জমে যাই। সারা শরীর বয়ে কেমন এক শিহরণ তৈরি হয়। আমি ছোট ছোট চোখ করে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকি। রিয়ান আর কিছু না বলে আমার সিটবেলটা লাগিয়ে সরে বসে। রিয়ান সরে যেতেই আমি বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেলি। রিয়ান তা দেখে মুচকি হেসে নিজের সিটবেল বেঁধে গাড়ি সার্ট দেয়। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রাস্তা-ঘাট একদম ফাঁকা। মাঝে মধ্যে দুই একটা গাড়ির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে গায়ে হীম বায়ুর ছোঁয়া পেতেই মনটা একদম জুড়ে যায়। আমি সিটে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি আর এই নিস্তব্ধ পরিবেশটা উপভোগ করতে থাকি। মাঝে মধ্যে আড়চোখে রিয়ানকে দেখতে থাকি। রিয়ান এক ধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে। পড়নে তার ব্ল্যাক টি-শার্ট আর ব্ল্যাক টাউজার। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে। হাল্কা গোলাপি ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি। শ্যাম বর্ণের হওয়া সত্ত্বেও বাম গালে থাকা কুচকুচে কালো তিলটা একদম স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। মুখ ভর্তি এক অদ্ভুত মায়া। আমি রিয়ানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলি,
-- আগে শুনতাম শুধু ফর্সা ছেলেরাই নাকি নজরকাড়া সৌন্দর্য বহন করে। কিন্তু এই ছেলে তো দেখছি শ্যাম বর্ণের হয়েও সেই সব বিলাইত থেকে টপকানো ধলা বিলাইদের হার মানাবে। এর এটিটিউডের আগুনেই তো সব পানি।
এইসব ভাবতে ভাবতেই আমার সাথে রিয়ানের চোখাচোখি হয়ে যায়। আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলি। হুট করেই কেমন অস্বস্তিকর আমার মধ্যে বিরাজমান হতে থাকে। কেন এমন হচ্ছে জানি না। বেশকিছুক্ষণ এইভাবে অতিক্রম হতেই রিয়ান গাড়ি থামায়। আমি চারপাশ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখি একটা ব্রিজের উপর এসে গাড়িটা থেমেছে। ব্রিজের দুইপাশ দিয়ে রঙে-বেরঙে লাইট জ্বলছে। আমার আর বুঝতে দেরি নেই যে এইটা "হাতির ঝিল"। আমি এর আগেও দুই-একবার এইখানে এসেছি বিধায় চিনতে তেমন অসুবিধে হয় নি। আমি এইবার রিয়ানের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাই। এইটা জানার আশায় যে তিনি আমাকে এত রাতে এইখানে আনার মানে কি?
রিয়ান একবার আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভ্রু উঁচু করে বলে,
-- হোয়াট? এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমাকে কি আজ একটু বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে নাকি?
রিয়ানের কথায় আমি কথায় আমি কিছুটা থমথম খেয়ে বলি,
-- হুহ! আজাইরা কথা বার্তা। আমি তো শুধু এইটা জানতে চাচ্ছিলাম যে আপনি আমায় এত রাতে এইখানে কেন এনেছেন? মতলব কি?
রিয়ান আমার কথা শুনে বা হাত দিয়ে চুল গুলো নাড়তে নাড়তে বলে,
-- মতলব তো অনেক কিছুই আছে কিন্তু তা তোমায় বলবো কেন? হু আর ইউ টু মি?
রিয়ানের এমন কথায় আমি কিছুটা তেতে উঠি। কিন্তু তাও নিজেকে শান্ত রেখে বলি
-- আমি আপনার একমাত্র বাবার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড এর একমাত্র মেয়ে।
আর হ্যাঁ, আমার আপনার এতসত মতলব জেনে কাজ নেই। আমাকে শুধু এইখানে নিয়ে আসার মতলবটা বললেই হবে।
রিয়ান আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ আমার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
-- বাসায় ভালো লাগছিল না তাই ভাবলাম বাইরে থেকে ঘুরে আসি। একা যেতে ইচ্ছে করছিল না বিধায় ভাবলাম এক রাক্ষসনীকে সাথে করে নিয়ে আসি। আর তাই তোমায় নিয়ে আসলাম। ব্যাস! এইটাই মতলব।
আমি কটমট দৃষ্টিতে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলি,
-- আমাকে আপনার রাক্ষসনী মনে হয়?
রিয়ান আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বাঁকা হেসে বলে,
-- ডু ইউ হ্যাভ এনি ডাউট?
রিয়ানের এমন সামনে এগিয়ে আসায় আমি কিছুটা থমথম খেয়ে যাই। আমি কিছুক্ষণ রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে এক দীর্ঘশ্বাস নেই। অতঃপর বলি,
-- নো! তা এখন কি এইখানেই বসে থাকবেন নাকি বের হবেন?
রিয়ান কিছু না বলে সরে এসে বেড়িয়ে যায় আর ঘুরে এসে আমার পাশের দরজাটা খুলে দেয়। আমি কিছুক্ষণ তার মুখের পানে চেয়ে থেকে সিটবেল খুলে বেড়িয়ে আসি। আর বিরবির করতে থাকি,
-- ভাব দেখলে বাঁচি না। হুহ!
এই বলে হাটা শুরু করি। রিয়ান আর আমি পাশাপাশি হাটছি। একটু সামনে গিয়েই আমরা দুইজন থামলাম। রেলিং এ দুই হাত রেখে পরিবেশটা উপভোগ করতে লাগলাম। বাইরে শো শো বাতাস বইছে। নদী থেকে পানির থৈ থৈ শব্দ কানে ভেসে আসছে। নদীর এই থৈ থৈ শব্দ বাতাসের শা শা শব্দের সাথে মিশে গিয়ে এক নতুন ধ্বনির সৃষ্টি করছে। যা বরাবরই আমার কানে এসে বারি খাচ্ছে। আর আমায় বিমুগ্ধ করছে। শূন্যহীন আকাশে আজ অজস্র তারার মেলা। তাদেরই মাঝে অর্ধগোল আকৃতির চাঁদ স্থির হয়ে আছে। নিস্তব্ধ রাত্রিতে এমন একটি পরিবেশ উপভোগ করতে পারবো ভাবতেই পারি নি। হুট করে মনের মধ্যে প্রশান্তির হাওয়া বইতে শুরু করে। আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে পরিবেশটা উপভোগ করি। চোখ খুলে পাশে তাকাতেই দেখি রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গভীর তার চাহনি। তা দেখার সাথে সাথে আমার ভ্রুকুটি কুঞ্চিত হয়ে আসে। সে হুট করেই আমার চুলের ব্যান্ডটা খুলে দেয় আর আমি হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সে আমার ব্যান্ডটা পকেটে গুজে একটা ভাব নিয়ে বলে,
-- এতক্ষণ পেত্নী পেত্নী লাগছিল এখন একদম পারফেক্ট রাক্ষসনী লাগছে। হুহ! ইউ সুড থেংক মি ফোর দিস।
আমি কিছুক্ষণ কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। আমি দাঁতে দাঁত চেঁপে বলি,
-- আপনি!
রিয়ান তার এক ভ্রু উঁচু করে বলে,
-- আমি কি?
আমি কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নেই। জানি একে বলে কাজ নেই। তাই ছোট করে বলি,
-- আস্ত খারুশ একটা।
রিয়ান বাঁকা হেসে বলে,
-- আই নো।
এতটুকু বলে আমি হাত দিয়ে চুলগুলো একপাশে এনে ঠিক করে নেই। অতঃপর আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলি,
-- রাস্তা পার হওয়ার সময় ঠিক মত পার হবেন। এক সপ্তাহ আগেই তো বড়সড় এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গিয়েছেন। ভাগ্য ভালো বলে শুধু হাতে ব্যথা পেয়েছিলেন। এখন থেকে একটু সাবধানে চলাচল করবেন।
রিয়ান আর কিছু না বলে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের পানে তাকায়। তা দেখে আমি এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকাই। দুইজনেই পরিবেশটা উপভোগ করি। অতঃপর রাত ২ টার দিকে আমরা ফিরে আসি।
____________________________________________
মেডিক্যালের ক্যান্টিনে বসে আছি। সাথে আনিশা আর পায়েলও। পায়েল মাথা নিচু করে বসে আছে আর আমি ও আনিশা মুখ গম্ভীর করে বসে আছি। তিনজনের মাঝেই পিন পিন নিরবতা। এই নিরবতা পেরিয়ে আনিশা বলে উঠি,
-- পায়েল তুই কেন আদিব ভাইকে এইভাবে এভোয়েট করছিস? তোদের মধ্যে কোন সমস্যা হলে তা মিটিয়ে নেয় না। এইভাবে খামাখা আদিব ভাইয়াকে কষ্ট দেওয়ার মানে নি?
পায়েল বেশি কিছু না বলে ছোট করে বলে,
-- আমাদের মধ্যে কোন সমস্যা হয় নি।
আমি পায়েলের দিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাই। অতঃপর ওর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারি,
-- কোন সমস্যা নেই তো সমস্যা কোথায়? এইসবের মানে কি?
পায়েল এইবার সোজাসাপটা ভাবে উত্তর দেয়,
-- আমার এখন তাকে ভালো লাগে না তাই তাকে এভোয়েট করছি। আর এইভাবেও আমি কালকে তাকে সব ক্লিয়ারলি বলেছি এখন সে যদি না বুঝতে চায় তাহলে আমি কি করবো?
আমি অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলি,
-- তুই বলছিস যে তোর এখন আদিব ভাইকে ভালো লাগে না? লাইক সিরিয়াসলি! তুই বলবি আমরাও ঢ্যাং ঢ্যাং করে তা মেনে নিব।
আমরা নিজ চোখে দেখেছি আদিব ভাইয়ের প্রতি তোর করা প্রত্যেকটা পাগলামিগুলো। তার প্রতি তোর অসীম ভালবাসা। সেগুলো আর যাই হোক মিথ্যে ছিল না।
পায়েল সব শুনে শক্ত গলায় বলে,
-- সব আবেগ ছিল। আবেগের বসে মানুষ কি না করে। আমিও করেছি। হোয়াট ইজ দ্যা বিগ ডিল? আদিব শুধুই আমার ভালোলাগা ছিল ভালবাসা নয়।
আনিশা এইবার কিছুটা চেঁচিয়ে বলে,
-- এইটা তুই এখন বলছিস? আগে বুঝিস নি এইসব? ভুলে যাস না, আদিব ভাই তোর কাছে ভালবাসার দাবী নিয়ে আসে নি বরং তুই তার কাছে ভালবাসার দাবী নিয়ে গিয়েছিলি। ভাইয়া তো কোন কালে তোর প্রতি দূর্বল ছিল না। তুই বাধ্য করেছিস তাকে দূর্বল হতে। তোর ভালবাসা বাধ্য করেছিল তাকে।
আর আজ যখন ছেলেটা তোকে পাগলে মত ভালবাসে তুই সেইসময় ওকে ডিচ করছিস? তুই এইটা কিভাবে করতে পারলি? কাল যদি ভাইয়া ফোন করে না বলতো তাহলে হয়তো জানতেই পারতাম না তুই যে এমন কিছুও করতে পারিস।
আমি কোন মতে আনিশাকে শান্ত করে বলে,
-- পায়েল প্লিজ আমাদের খুলে বল কি হয়েছে? তুই না বললে আমরা বুঝবো কিভাবে? আমি জানি আদিব ভাইয়া তোর কোন মোহ বা ভালোলাগা না বরং তোর ভালবাসা। তুই কেন করছিস এইসব বল প্লিজ।
পায়েল এইবার নরম চোখে তাকিয়ে বলে,
-- যা হচ্ছে ভালোর জন্যই হচ্ছে। তাই যেটা যেভাবে চলছে সেইভাবে চলতে দে। এতেই সবার মঙ্গল। তোদের ফ্রেন্ডশিপ রাখতে মন চাইলে রাখবি অথবা না। পুরো সিদ্ধান্তই তোদের উপর। যদি ফ্রেন্ডশিপটা রাখিস তাহলে প্লিজ আর এই বিষয় বস্তুটি নিয়ে আর কথা উঠাবি না। এইটা আমার রিকুয়েষ্ট। এখন ক্লাস আছে আমি আসি।
এই বলে পায়েল ব্যাগ নিয়ে কোন মতে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালায়। আমি আর আনিশা হতভম্ব হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। পায়েল যাওয়ার সময় ওর চোখের কোনে যে পানি চিকচিক করছিল তা আমার চোখ এড়ায় নি। পায়েল যে খুব বড় কিছু লুকাচ্ছে তা নিশ্চিত। কিন্তু তা কি সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। অতঃপর সব ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই। আমি আর আনিশাও ব্যাগ গুছিয়ে ক্লাসে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হই।
_____________________________________________
ডাঃ রিয়ানের কেবিনে বসে আছি আর তার অপেক্ষা করছি। ক্লাস শেষে যখন বেরুতে নিব তখন পিওন এসে আমায় জানায় যে ডাঃ রিয়ান নাকি আমায় ডেকে পাঠিয়েছে। আমিও কথা না বাড়িয়ে এসে পড়ি। কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে। কেন ২০ মিনিট ধরে তার কেবিনে বসে আছি অথচ তার কোন খোঁজ খবরই নেই। আজব তো! এই মানুষ সবসময়ই এমন করে। সকলের বেলায় পাঙ্কচুয়াল হলেও আমার বেলায় সব ফুস। সাদে কি আর খারুশ বলি। হুহ!
বসে থাকতে বেশ বিরক্তি লাগছিল বিধায় আমি কেবিনটা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি। বেশ পরিপাটি আর সুন্দর তার কেবিনটি। আমি তার টেবিলের সামনে এসে ফাইলগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি। এমন সময় নিচের ড্রায়ারের দিকে আমার নজর যায়। একটা ফটোফ্রেমের কিছুটা অংশ বেড়িয়ে আছে। ছবিটা সম্ভবত কোন মেয়ের। কেন না যে অংশ বেড়িয়ে আছে তাতে কোন এক মেয়ের শাড়ির নিচের দিকটা দেখা যাচ্ছে। তা দেখার কৌতূহল জাগে। আমি ড্রয়ার টান দিতে যাব এমন সময় ডাঃ রিয়ান কেবিনে একটা ফাইল দেখতে দেখতে আসে। দরজা খুলার আওয়াজে আমি সামনে তাকাই। ডাঃ রিয়ানকে দেখার সাথে সাথে আমি সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। রিয়ান ফাইল থেকে নজর সরিয়ে নিয়ে সামনে তাকাতেই আমাকে দেখতে পায়। আমি কিছু না বলে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দেই। তা দেখে ডাঃ রিয়ান ভ্রুকুটি আড়া আড়ি ভাবে কুঞ্চিত করে তাকায়। এই হাসির মানে বুঝার চেষ্টা করে। অতঃপর আমায় কিছু না বলে নিজের চেয়ার টেনে বসে। আমি সাইডে সরে এসে তার অপর পাশে বসি। তিনি কিছুক্ষণ ফাইল দেখে আমার দিকে তাকায়। অতঃপর আমায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমার ফোন বেজে উঠে। আমি ফোন বের করতেই স্ক্রিনে "বেবি" নামটা ভেসে আসে। সাথে সাথে আমার ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে।
#চলবে
0 Comments