Ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

আসক্তিময় ভালোবাসা পর্ব ৮


 ডাঃ রিয়ান শার্টের হাতা ফোল্ড করছেন আর আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে পিছিয়ে চলেছি। একসময় পিছাতে পিছাতে টেবিলের সাথে লেগে যাই। পাশে চেপে যেতে নিব এমন সময় ডাঃ রিয়ান আমার দুইপাশ দিয়ে টেবিলের উপর হাত রাখেন আর আমায় তার বাহু দুইটির ফাঁকে আটক করে ফেলেন। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না হঠাৎ ডাঃ রিয়ানের কি হলো। ডাঃ হাল্কা আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তা দেখার সাথে সাথে আমি ভয়ে মাথা পিছে নিয়ে নেই। চোখ জোড়া তার মুখ পানে স্থির করতে গিয়েও ব্যর্থ হলাম। তাই আমি মাথা নুয়ে নিলাম। সে অতি তীক্ষ্ণ সুরে বলে,


-- এতক্ষণ কার সাথে ছিলে তুমি? কে ছিল সে? তার সাথে এত হাসাহাসি কিসের তোমার? এন্সার মি ডেমিট?


এই বলে টেবিলে হাল্কা বারি দিলেন। কিন্তু তাতেও যেন আমি কেঁপে উঠি। আমি নিচু সরে বলি,

-- আমার ক্লাসমেট ছিল ও। পড়া বুঝছিল না তাই বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। 


ডাঃ রিয়ান তেতে উঠে বলে,

-- তোমায় কেন বুঝাতে হবে? বুঝাতে হবে বলে কি ওর পাশে বসতে হবে? হাসাহাসি কর‍তে হবে? 


আমি ডাঃ রিয়ানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে বলি,

-- হলেও বা কি?


আমার কথা শুনে হয়তো ডাঃ রিয়ান বেশ রেগে যায়। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে নেয়। অতঃপর সে কিছুটা শান্ত হয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে,


-- আমার বুকের বা পাশে হাত রাখ। 


কথাটা শুনার সাথে সাথে আমি ৮২০ ভোল্টেজের শোকড খাই। মাথা উঁচু করে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি। মনে মনে ভেবে নেই যে ডাঃ রিয়ান পাগল হয়ে গিয়েছে। একে যতদ্রুত সম্ভব পাবনায় পাঠাতে হবে। আমি যখন এই ভাবনা ভাবছি তখন ডাঃ রিয়ান বলে উঠে,


-- বুকের বা পাশটাই হাত রেখ দেখ ঠিক কতটা পরিমাণ গরম হয়ে আছে জায়গাটি। কেন জানো? হৃদয় পুড়ছে আমার, তোমার জন্য। শুধুমাত্র তোমার জন্য কতটা পুড়ছি আমি। খুব ভালো লাগে না আমার এইভাবে পুড়তে দেখতে। 


আমি এইবার সর্বশান্ত হয়ে যাই। অতি শীতল দৃষ্টিতে তার চোখের দিকে তাকাই। আজ তার চোখের গভীরতা খুব গভীর। আমি পারছি না বেশিক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে। আমি মাথা নিচু করে বলি,


-- এর কারণ আমি কোন মতেই হতে পারি না ডাঃ রিয়ান। আপনার হয়তো বদহজম হয়েছে তাই এমন লাগছে। ঔষধ খান ঠিক হয়ে যাবে।


আমার এই কথায় ডাঃ রিয়ানের প্রতিক্রিয়া ছিল তা আমার অজানা। কেন না আমি তখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা থাকার পর রিয়ান হুট করে চেঁচিয়ে বলে,


-- নিজের এই অবুঝ ভাব আমাকে আর কত দেখাবে? সব বুঝে শুনেও এমন অবুঝের ভ্যান বন্ধ করো। ফোর গট সিক! 

তুমি বাচ্চা নও যে, আমার সামান্য অনুভূতি গুলো বুঝতে তুমি অক্ষম হবে, তোমার প্রতি আমার চাহনিগুলো বুঝতে ব্যর্থ হবে, আমার জন্য তুমি কি তা বুঝতে অক্ষম হবে।  


আমি তখনও মাথা নিচু করে থাকি। কিছু বলছি না। তা দেখে ডাঃ রিয়ান রেগে গিয়ে টেবিলের উপরে থাকা পানিভর্তি গ্লাসটি ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে,

-- কি কথা বের হয় না এখন মুখ দিয়ে? বল তুই বুঝিস না আমি অনুভূতিগুলো? বুঝিস না যে আমার সহ্য হয় না তোকে অন্য ছেলের পাশে দেখলে? এমনকি তোর ছাঁয়ার পাশেও কেউ ঘেষুক তাও আমার বোধগম্য নয়। 


আমি তার কথাগুলো শুনে একবার তারদিকে তাকাই। অতঃপর সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলি আর আগের ন্যায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। এখন কথা বলেই মানে বিপদকে ডেকে আনা। ডাঃ রিয়ান এইবারও আমার নিরবতা দেখে বেশ রেগে যায়। আমার পাশ থেকে সরে এসে সে সজোরে চেয়ারে লাথি দেন। রাগে ফুসতে থাকে। হাল্কা চেঁচিয়ে বলে,


-- বলবে না তো কিছু? তাই তো! বেশ কথা বলতে হবে না তোমায়। কিন্তু একটা কথা মাথায় রেখ আমার থেকে তুমি দূরে যেতে পারবে না। কোন মতেই না! আমারে পিঞ্জারেতেই তোমায় আটক থাকতে হবে। মাইন্ড ইট! 


এই বলে গটগট করে ডাঃ রিয়ান রুম থেকে বের হয়ে যায়। আর আমি হ্যাবলার মত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। অতঃপর সব ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের ব্যাগটা ঠিক করে পা সামনে এগুতে নিব ঠিক এমন সময় ডাঃ রিয়ান আবার রুমে প্রবেশ করে। আমার কাছে এসে আমার হাত চেপে ধরে দ্রুত পায়ে হাটা শুরু করে। তার এমন এহেম কান্ডে আমি হকচকিয়ে যাই। বিষ্ময়কর কন্ঠে বলি,


-- কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?


আমার কথা শুনে ডাঃ রিয়ান থমকে দাঁড়ায়। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,


-- এখন মুখের বলি ফুটেছে তাই না? 


আমি কিছুটা হতভম্ব গলায় বলি,

-- আমার মুখ, আমার বলি। সো যখন ইচ্ছা তখন প্লে আবার যখন ইচ্ছা তখন পোস হতেই পারে। হোয়াট ইজ দ্যা বিগ ডিল? 


ডাঃ রিয়ান আমার উত্তর শুনে আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। আমি এইবার আমতা আমতা করে বলি,


-- কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?


ডাঃ রিয়ান আমার কথা শুনে তেতে উঠে বলে,

-- কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছি। মাটি খুঁড়ে রেখে এসেছি, তোমাকে আজ কবর দিব বলে। 


এই কথা শুনে আমার কি হলো জানি না। আমি চট করে ডাঃ রিয়ানকে জিজ্ঞেস করে বসি,


-- আমায় ছাঁড়া আপনি বাঁচতে পারবেন ?


কথাটা ডাঃ রিয়ানের কানে গিয়ে বারি খেতেই তার হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসে। সে একপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর আহত কন্ঠে বলে,


-- তুমি পারবে তো? 


ডাঃ রিয়ানের এমন পাল্টা প্রশ্নে আমি হকচকিয়ে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে মিষ্টি হেসে বলি,


-- হ্যাঁ পারবো। 


ডাঃ রিয়ান এইবার মুচকি হেসে বলে,

-- তাহলে আমি কিভাবে পারি বলোতো? 


এই বলে হাতের বাঁধনটা পুনরায় শক্ত করে ধরেন আর আমায় টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। অতঃপর গাড়ির কাছে এনে আমায় গাড়িতে বসিয়ে দেন। সিটবেল বেঁধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করেন। আর বিরবির করে বলতে থাকে,


-- তোমায় আবার একা ছেড়ে দিব অন্য কোন ছেলের সাথে হাসাহাসি করতে। ইম্পসিবল! 


কথাগুলো আমার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে  ঠিকই কিন্তু তাও আমি না শুনার ভ্যান করে বসে রই। কিছু প্রশ্ন না করায় শ্রেয়৷ কেন না কিছু প্রশ্নের প্রতিত্তরে থাকে পাল্টা প্রশ্ন। আর সেই পাল্টা প্রশ্নের উত্তর আর সময়টা সবসময় কাঙ্খিত হয় না। তাই আমি হাল্কা হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে জানালার দিকে মুখ করে বসে থাকি। 


__________________________________________


বাসসেন্ড এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আনিশা। তীব্র ভাবে বাস আসার অপেক্ষা করছে। সময়ের গন্ডি ঠিকমত পার হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য বার বার বা হাতে থাকা ঘড়িটি দেখছে। সকাল থেকেই আকাশ আজ ঘোলা। পুরো আকাশ জুড়ে রাজত্ব করছে ধূসর রঙের মেঘের ভেলাগুলো। সম্ভবত আজ ভারী বর্ষণ হবে। হওয়াটাও স্বাভাবিক। শীতকাল আসছে নিকটে। শীতকালের আহ্বান জানাতেই হয়তো আজ এই বর্ষণের আগমন। গাছের পাতাও বেশ শুকিয়ে এসেছে। শরৎ-এর ছোঁয়া গাছগুলো যতটা না প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল শীতের ছোঁয়া তারা ততটাই মুমূর্ষু হয়ে উঠেছে। 


 আনিশার অপেক্ষার প্রহরগুলো ধীরে ধীরে বিরক্তি পরিনত হচ্ছে। কিছুক্ষণের মাঝেই হয়তো সে বিরক্তির শেষ পর্যায়ে চলে যাবে। ঠিক এরই মাঝে কোথ থেকে একটি গাড়ি এসে আনিশার পাশ চেপে এসে দাঁড়ায়। হুট করে এমন হওয়ায় আনিশা কিছুটা চমকে উঠে। অতঃপর নিজেকে সামলিয়ে সেই গাড়ির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। এইভাবে কেউ গাড়ি চালায়? আরেকটু হলে তো আনিশা আল্লাহর প্রিয় হয়ে যেত। আনিশা এইবার রাগে চেঁচিয়ে বলে,


-- গাড়ি কি চাঁন্দের দেশের বাই পাস রোডে চালান? আরেকটু হইলে তো আমি মরে টরে যেতাম। এই আপনার লাইসেন্স কে দিসে? এই নামেন গাড়ি থেকে। নামেন বলছি! আজ আপনার একদিন কি আমার দুই'শ পঞ্চাশ দিন। নামেন কইসি! 


এই বলে আনিশা গাড়ির দিকে তেড়ে যায়। ঠিক এমন সময় গাড়ির দরজা খুলে একজন নেমে আসে। আনিশা তাকে দেখার সাথে সাথে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকায়। 


#চলবে


Post a Comment

0 Comments

তুমি আমার হবে একদিন